রাফি ছোটবেলা থেকেই দুরন্ত ছিল, তবে সেটা সীমার মধ্যে ছিল যতদিন মা–বাবার শাসন মানত। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ভেতর একটা অদ্ভুত অহংবোধ জন্ম নেয়। স্কুল থেকে ফিরেই দরজা বন্ধ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইলে ডুবে থাকত, মা কিছু বলতে গেলেই চিৎকার করে উঠত।
বাবা, একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী, চুপচাপ সহ্য করতেন সবকিছু। হয়তো ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই। মা প্রতিদিন রান্না করে রাখতেন, কিন্তু রাফি বাইরে খেতে পছন্দ করত, আর বাড়ির খাবার নিয়ে বলত, “এই জিনিস খেয়ে মানুষ বাঁচে?” মা কিছু বললে গলা চড়িয়ে বলত, “আমার জীবন আমি যেমন খুশি তেমনভাবে চলব।”
বন্ধুবান্ধব ছিল সব আধুনিক লাইফস্টাইলের মানুষ। কেউ চাকরির নামে সিটিং করে, কেউ আবার অর্ধেক সময়ে টিকটক বানিয়ে দিনে পাঁচশো টাকার স্বপ্নে বাঁচে। রাফিও তাদের মতোই হতে চেয়েছিল।
একদিন মা বললেন, “বাবা, অন্তত নামাজটা পড়ো, কিংবা একটু আমাদের সঙ্গে বসে খাও।” রাফি বিরক্ত হয়ে উঠে পড়ল, “এসব পুরোনো দিনের ব্যাপার। আমার টাইম নেই।”
মা চুপ করে চোখ মুছলেন।
দিন যায়, মাস যায়। রাফি একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ পায়। স্বাধীনভাবে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। প্রথমদিকে মনে হচ্ছিল, জীবন বুঝি এখন শুরু হয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে দায়িত্ব, বিল, অফিসের টেনশন সব যেন তাকে ঘিরে ধরতে লাগল। বন্ধুরা একে একে দূরে সরে যায়। একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে হঠাৎ অ্যাক্সিডেন্ট হয়। পা ভেঙে যায়, হাতে সেলাই। হাসপাতালের বেডে শুয়ে সে একা।
চোখের কোনে পানি নিয়ে ফোন করল সেই নম্বরে যেটা একসময় মাকে “অপমানের সুরে” বলত — “অনেক বার বলেছি, আমাকে ফোন কোরো না।” ফোন ধরলেন মা। কণ্ঠটা কাঁপছিল, “রাফি, মা তুমি ঠিক আছো?”
সেদিন বুঝল রাফি — মা–বাবার ভালোবাসার কোনো বিকল্প হয় না। সে যতো ভুল করুক না কেন, মা–বাবা কখনো ছেলেকে ঘৃণা করে না। তারা শুধু অপেক্ষা করে — সন্তানের ফিরে আসার।
হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পর রাফি প্রথমবারের মতো বাবা-মার পায়ের কাছে বসে বলেছিল, “মাফ করে দিও। আজ বুঝি, তোমরা কী দিতে চেয়েছিলে, আর আমি কী হারিয়ে ফেলেছিলাম।”
#মা_বাবার_ভালোবাসা #অবাধ্য_সন্তান #বাংলা_গল্প #নৈতিক_শিক্ষা #পারিবারিক_গল্প #ভুলের_শোধন #নীলপরী_ব্লগ #BanglaMoralStory #FamilyEmotions #ParentalLove