তপস্যার আলোয় জ্বলে ওঠা জীবন

পাহাড়ঘেরা এক ছোট্ট গ্রামে জন্ম নিয়েছিল অরুণ। দারিদ্র্য আর কষ্ট ছিল তার নিত্যসঙ্গী। ছেলেবেলায় খেলাধুলা বা আনন্দ ছিল না, ছিল শুধু জীবনের কঠিন বাস্তবতা। বাবা ছিলেন একজন লাঙ্গলচাষী, মা ক্ষেতের কাজ করতেন। এক মুঠো ভাত জোগাড় করতেই দিন কেটে যেত।

তবে অরুণ অন্য সবার থেকে আলাদা ছিল। ছোটবেলা থেকেই তার চোখে ছিল বড় স্বপ্ন—মানুষের জন্য কিছু করার স্বপ্ন। স্কুলে যেত ছেঁড়া জামা পরে, খালি পায়ে হাঁটত মাইলের পর মাইল। তবুও বইয়ের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অদ্ভুত। রাত জেগে কেরোসিনের আলোয় পড়ত, আর নিজের ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনত।

গ্রামের সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করত। কেউ বলত, “গরিবের ছেলে পড়ে কি হবে?” আবার কেউ বলত, “এই ছেলে পাগল হয়েছে।” কিন্তু অরুণ কারো কথায় দমে যেত না। সে জানত, তপস্যা ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না।

এসএসসি পরীক্ষায় সে প্রথম হলো, জেলার মধ্যে! খবর ছড়িয়ে পড়ল। কিছু মানুষ তখন হঠাৎ করে তাকে ‘বুদ্ধিমান’ বলতে লাগল। কিন্তু সম্মান পেতে যে কত দেরি লাগে, অরুণ তা হাড়ে হাড়ে বুঝেছিল।

কলেজে উঠেও একই রকম সংগ্রাম চলতে থাকল। খাওয়া নেই, থাকার ব্যবস্থা নেই, বই কেনার টাকাও নেই। তবুও অরুণ হাল ছাড়েনি। সে বিভিন্ন মন্দির ও আশ্রমে কাজ করত, বিনিময়ে কিছু খাবার আর একটু পড়ার সময় পেত। কখনো মেঝেতে শুয়ে, কখনো গাছতলায় বসে পড়ত।

সময় গড়িয়ে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো স্কলারশিপে। এখানে গিয়েও থামল না তার সংগ্রাম। দিনে পড়া, রাতে টিউশন করে খরচ চালানো, আর সপ্তাহে একবার করে গ্রামেগিয়ে মাকে কিছু টাকা দিয়ে আসা—এই ছিল তার জীবনচক্র

অবশেষে, তার তপস্যা সার্থক হলো। পাস করার পর একটা ভালো চাকরি পেল। কিন্তু সে শহরে থেকে আরাম করতে চায়নি। ফিরে গেল সেই গ্রামে, যেখানে কেউ তাকে ‘পাগল’

বলত। এবার সে নিজেই সেখানে একটা ফ্রি স্কুল খুলল, গরিব ছেলেমেয়েদের পড়াবে বলে।

তার মুখে সবসময় একটি কথা শোনা যেত—”আমার কষ্টই আমার শিক্ষক ছিল।

অরুণের জীবন প্রমাণ করল, সত্যিকারের মহাপুরুষ তারাই, যারা কষ্টকে জয় করে অন্যদের আলোকিত করে।

#মহাপুরুষের_জীবন #সংগ্রাম_এর_গল্প #বাংলা_অনুপ্রেরণামূলক_গল্প #জীবনের_প্রেরণা #তপস্যা_ও_সফলতা #গ্রামের_জীবন #কষ্টের_জয় #বিনামূল্যে_শিক্ষা #গরিবের_সংগ্রাম

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *